কেমন ছিলো আমাদের জীবন ইন্টারনেট আসার আগে
ইন্টারনেটের
আগে জীবন: একটি স্মৃতিচারণা 😢
ইন্টারনেট আবিষ্কারের আগে আমাদর জীবন
কখনো কি ভেবেছেন
ইন্টারনেটের আগে আমাদের জীবন কেমন ছিল? বর্তমানের ডিজিটাল দুনিয়ায় আমরা প্রতিদিন নতুন
নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। আমাদের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, এবং ইন্টারনেটের
অফুরন্ত তথ্যের ভাণ্ডার। কিন্তু একটু ফিরে তাকালেই দেখতে পাই, সেই সময়ের কথা যখন আমাদের
চারপাশে ইন্টারনেটের কোনো ছোঁয়া ছিল না। তখনকার জীবন ছিল একদম আলাদা, আর স্মৃতিগুলো
যেন এক অন্য রকম সৌন্দর্য ছিল।
চিঠি লেখার কাল
তখন যোগাযোগের
প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি। বন্ধুর সাথে যোগাযোগের জন্য, পরিবারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য
অথবা প্রিয়জনের জন্য একটি চিঠির প্রয়োজন ছিল। চিঠি লিখতে, ডাকপিয়নকে পাঠাতে এবং উত্তর
পেতে বেশ কয়েকদিন লেগে যেত। তবে সেই অপেক্ষা ছিল এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। চিঠি পেলে
হৃদয়ে উচ্ছ্বাস অনুভব করতাম। ইন্টারনেটের যুগে যেখানে সব কিছু খুব দ্রুত ঘটে, সেই সময়ে
একটি চিঠির জন্য অপেক্ষা করা মানে ছিল জীবনের গভীরতা অনুভব করা।
তথ্যের খোঁজে
তথ্য সংগ্রহের
জন্য লাইব্রেরির ওপর নির্ভর করতে হতো। বইয়ের পাতা উল্টে, রেফারেন্সের জন্য ঘণ্টার পর
ঘণ্টা কাটাতে হতো। কোনো প্রজেক্টের জন্য তথ্য খোঁজার চেয়ে একটি বই পড়ার অভিজ্ঞতা ছিল
অনেক বেশি ফলপ্রসূ এবং মানসিক শান্তির। প্রতিটি বই ছিল এক নতুন দিগন্ত, আর সেই দিগন্তে
যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হতো। বই পড়ার সময় আলাদা এক অনুভূতি ছিল, যা আজকাল অনলাইন
গবেষণায় মিলছে না।
গান শোনার
স্বাদ
গান শোনার জন্য
তখন আমাদের রেডিও বা ক্যাসেট প্লেয়ার ব্যবহার করতে হতো। প্রিয় গানের জন্য অপেক্ষায়
থাকতাম, এবং যখন গান শুনতে পেতাম, তখন মনে হতো যেন জীবন নতুন করে শুরু হলো। আমাদের
পছন্দের গানের জন্য যতটা অপেক্ষা করতে হতো, তা ছিল এক মধুর অভিজ্ঞতা। রেডিওর ডিস্ক
জকি যখন আমাদের প্রিয় গান বাজাত, তখন যেন আমাদের হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ উঠত। এখন পছন্দের
গান শোনার জন্য একটি প্লেলিস্টে ক্লিক করলেই হয়, কিন্তু সেই মিষ্টি প্রতীক্ষার অনুভূতি
কোথায়?
বন্ধুদের
সাথে সাক্ষাৎ
বন্ধুদের সাথে
দেখা করার জন্য বাইরে যেতে হতো। স্কুলের পরে বন্ধুরা একত্রিত হতো এবং পার্কে হাঁটা,
ছাদে বসে গল্প করা কিংবা খেলা—এগুলো ছিল এক অন্যরকম আনন্দ। প্রতিদিনের
এই ছোট ছোট সঙ্গী ও সাক্ষাৎ, সত্যিই ছিল জীবনের আনন্দের অংশ। বর্তমান সামাজিক মাধ্যমের
দৌলতে আমরা অনেক দূরত্ব পেরিয়ে গেলেও, বাস্তবের মধুর সম্পর্কগুলি মাঝে মাঝে অনলাইন
থেকে দূরে সরে যায়। যখন আমরা মুখোমুখি সাক্ষাৎ করতাম, তখন যে হাসি, আনন্দ, এবং সংবেদনশীলতা
ছিল, সেটি এখন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের একটি ছবিতে ধরা পড়ে না।
লেখালেখির
আনন্দ
তখন হাতের কলমে
লেখার ব্যাপারটি ছিল আলাদা। ডায়েরি লেখার সময়, অনুভূতিগুলো লিখে প্রকাশ করার সুযোগ
ছিল। হাতে লেখা একটি পৃষ্ঠা অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গাঢ় ছিল। লেখার সময়
কালি, পেন্সিল, কিংবা কলমের স্পর্শ ছিল এক অনন্য অনুভূতি। এখন ইমোজির মাধ্যমে আমরা
অনেক কিছু প্রকাশ করি, কিন্তু তাতে কি সেই গভীরতা রয়ে যায়? প্রতিটি লেখায় যে আন্তরিকতা
এবং প্রেম ছিল, সেটি এখনকার ডিজিটাল যুগে হারাতে বসেছে।
সংগ্রহে হারানো
মুহূর্ত
বর্তমানের ইন্টারনেটনির্ভর
জীবনে এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো যেন হারিয়ে গেছে। ইন্টারনেট আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে,
তবে কিছু অমূল্য মুহূর্ত হারিয়েও ফেলেছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, ইন্টারনেটের আগের সেই সরল,
মধুর দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারলে কত ভালো হতো।
আমাদের জীবন
তখন খুবই সাদামাটা ছিল, কিন্তু সেই সাদামাটাও ছিল এক অন্যরকম সৌন্দর্য। মানুষের সঙ্গে
মানুষে সম্পর্কগুলো ছিল দৃঢ়, কারণ যোগাযোগের মাধ্যমগুলো খুবই সীমিত ছিল। সামাজিক মিডিয়ার
দৌলতে আমরা অনেক দূরত্ব পেরিয়ে গেলেও, সেই সাদামাটা সম্পর্কের গভীরতা এখন অনেকটা কমে
গেছে। ইন্টারনেটের আগের সময়গুলোতে সামাজিক মূল্যবোধ এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব
ছিল বেশি।
সচেতনতা ও
উপলব্ধি
তবে আমরা যদি
ইন্টারনেটের সুবিধাগুলোকে ভালভাবে ব্যবহার করতে পারি এবং মাঝে মাঝে সেই পুরনো দিনের
স্মৃতিগুলো মনে করতে পারি, তাহলে জীবনকে আরো সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে পারি। আমাদের
স্মৃতিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সেই সাদামাটা সম্পর্কের
গুরুত্ব শেখাতে হবে।
অবশেষে, ইন্টারনেট
আমাদের জীবনকে অনেকভাবে পরিবর্তন করেছে। তবে মাঝে মাঝে পিছনে তাকানো এবং সেই পুরনো
দিনের স্মৃতিগুলো মনে করা আমাদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ
করার জন্য মাঝে মাঝে সেই পুরনো দিনের কথাগুলো মনে করলেই ভালো লাগবে। সুতরাং, আসুন আমরা
নিজেদের মধ্যে সেই আন্তরিকতা ও সম্পর্কের গভীরতা ফিরিয়ে আনি, যাতে আগামী প্রজন্মও সেই
অমূল্য স্মৃতিগুলো ধারণ করতে পারে। 😔
পুতুল আলতাব , Putul Altab
কোন মন্তব্য নেই