বাচ্চাদের পড়ানোর কৌশল Easy way to teach kids
শিশুদের পড়ায় মনোযোগ বাড়ানোর উপায়
বাচ্চাদের পড়ানোর সহজ উপায় |
আপনি সারাদিন আপনার বাচ্চাকে
পড় পড় বলছেন কিন্তু তাও বাচ্চা পড়তে চাচ্ছে না বরং আরও বিরক্ত হয়ে উঠেছে। এখন
যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় যে আপনার বিরক্তিকর কাজ করার সময় আপনার কেমন লাগে ? আর
আপনার অপছন্দের কাজ কি আপনি স্বেচ্ছায় করে ? একইভাবে বেশিরভাগ সময় বাচ্চারা মনে
করে লেখাপড়াও অন্যান্য শ্রমসাধ্য কাজের মতই এটি একটি কষ্টকর কাজ। তারা বরং খেলাধুলা আর দুরন্তপনায় বেশি আনন্দ
পেয়ে থাকে আর তাই পরা খেলতে বেশি ভালোবাসে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচু পর্বতমালা
আপনিও যদি শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লেকচার শুরু
করেন , তবে তারা একে আরও বিরক্তিকর মনে করবে। বরং আপনার বাচ্চাকে খেয়াল করুন। কোনকোন
বিষয়ে তার আগ্রহ বেশি, কিভাবে তাকে হ্যান্ডেল করবেন । আপনি আপনার কৌশল মতো শিশুকে
পড়াশোনায় মাঝে মনোযোগী করাবেন । অনেক বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন গবেষণা করে দেখেছে যে
বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ করে তুলতে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শও তারা দিয়েছেন ।
আজকে আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। কিভাবে শিশুদের পড়াশোনা আনন্দময় করে তুলতে
যে কৌশল অনুসরণ করবেন।
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা । শুদ্ধ
বাংলা শেখার প্রতি পরিবারের দায়িত্ব সেই সাথে ইংরেজি ভাষার প্রতি গুরুত্ব দিতে
হবে । মাকে সহনশীল হতে হবে বাচ্চার প্রতি, বাচ্চার লেখাপড়া শুরুর দিকে মাকে
অবশ্যই সহনশীল হতে হবে । বাচ্চা পড়তে না চাইলে কাঁদলে বিরক্ত করলে মাকে ধৈর্য
অবলম্বন করতে হবে । দেখা যায় যে শিশুটির দিব্যি মনের আনন্দে আর স্বাভাবিক
চাঞ্চল্যতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাদিন। অথচ পড়তে বসলে সে শিশুর মাথা থেকে কোথা
থেকে যেন ভর করে রাজ্যের দুষ্টুমি।
কখনো ঘুমের ভান ধরে আবার
কখনোবা টিভি দেখার বায়না ধরে আপনার লক্ষী ছেলে কিংবা আপনার আদরের মেয়েটি।আপনার
শিশুর এই শিশুতোষ গল্প করে মেজাজ হারিয়ে ফেলা যাবে না কখনো। অনেকেই দেখা যায় অহেতুক
শাসনের পাশাপাশি শিশুর গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন তাঁর বাস্তবিক অর্থে কোনো ফলাফল
নেই । পড়াশোনা শুরু করার প্রাথমিক ধাপ এবং আনন্দদায়ক করার দায়িত্ব অবশ্যই
পিতা-মাতার । আপনার সন্তানের উপর পড়াশোনা চাপিয়ে দেয়া নয় বরং আনন্দময় করে
তুলুন । শিশুরা আনন্দ চাই, পড়াশোনা যদি আনন্দময় হয়ে ওঠে তবে সে হবে আগ্রহী
আপনার সন্তান।
- কিভাবে বেকারত্ব অভিশাপ থেকে মুক্তি
- বাংলাদেশের সর্ব বৃহত্তর চিড়িয়াখানা
- অস্থিরতা দূর করার উপায়
এই কাজ করার সময় আপনার আচরণে আসল ভূমিকা পালন করে। লেখাপড়া
মজার উপস্থাপন করুণ।শিশুটি মজা করতে করতে পড়ার কাজটি সারবে। শিশুটির জন্য চাই
উপযুক্ত পরিবেশ , সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সেই অধিকাংশ শিশু লেখাপড়ায়
হাতেকড়ি আরম্ভ হয় ।
শিশুর লেখাপড়া শেখার জন্য
একটা ভাল সুন্দর পরিবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কারে থাবে। অনুকরণপ্রিয়
শিশুরা সবসময় তাদের চারপাশে বা আশেপাশের বিভিন্ন
কিছু দেখে শিখতে থাকে, আর সেই জন্য শিশুর শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে বাবা
মাকে ।
অনেক সময় দেখা যায় যে আপনি আপনার
শিশুটিকে পড়তে বলে আপনি নিজেই টিভি দেখতে বসে গেলেন।যা-কিনা শিশুর পড়াশোনায় অনেক
অনীহা সৃষ্টি করে তোলে। শিশুর বই পড়ার সময় টা শিশুর পাশে থেকে তাকে বোঝান যে
লেখাপড়ার এই সময়টাতে আপনিও গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছেন। এমনকি যদি সম্ভব হয় তাহলে
শিশুর জন্য আলাদা একটা রুমের ব্যাবস্থা করুন।
আপনি ইচ্ছে করলে শিশুর যে রুমে ঘুমায় সেই রুমের কোনায় একটি
পড়ার টেবিল দিয়ে দিন । টেবিলের গায়ে শিশুর প্রিয় কার্টুন চরিত্র গুলো ব্যবহার
করুন। কৌশলে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলুন, যে বয়সের শিশুর খেলাধুলা করার কথা ঐ
বয়সে পড়তে বসলে শিশুদের বিরক্ত হওয়াটাও স্বাভাবিক । সেইজন্য আনুষ্ঠানিক
পড়াশোনার সময় বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই তাকে একটু একটু করে পড়াশোনার বিভিন্ন
বিষয়গুলো সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
শিশুর খেলার ছলে শিশুকে বিভিন্ন
ছড়া শোনানোর মাধ্যমে সেগুলোর প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশুর মাঝে যদি গল্প
শোনান জোক থাকে তাহলে তাকে পাশে নিয়ে যে কোনো একটি বই থেকে শিশুকে মজার মজার গল্প
পড়ে শোনান । গল্প গুলো যদি শিশুর ভালো লাগে তাহলে সে নিজেও গল্প পড়ার জন্য কিভাবে
বানান করে পড়তে হয় তা শিখতে চেষ্টা করবে ।
এভাবে শিশুকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দানের আগে তৈরি করে নিতে হবে। শিশুদের সৎসঙ্গ ও সুস্থ পরিবেশ দিন কারণ কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ ।তাই শিশুর মধ্যে শৈশব থেকে ভালো অভ্যাস গুলো গড়ে তুলতে হবে।এবং অবশ্যই সঙ্গী নির্বাচনে নির্ভুল হতে হবে। মা বাবাকে এই ব্যাপারে সন্তানকে স্কুলে ভর্তির সময় থেকে সাবধান ও সচেতন করতে হবে ।
যেসব ছাত্র লেখাপড়ায় ভালো,
নিয়মিত ক্লাস করেও মেধাবী হিসেবে পরিচিত। আচার-আচরণ ভালো, খেলাধুলা করে,
লেখাপড়ার পাশাপাশি সাহিত্য উন্নয়নমূলক চর্চা করে এমন ভালো ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে
বাচ্চাকে মিশতে সহযোগিতা করবেন। সন্তানের খোঁজ খবর নিতে সপ্তাহে একবার হলেও স্কুলে
গেলে আপনি বুঝবেন আপনার সন্তানের অবস্থা ।
আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠুক
বাঙালির স্বপ্ন আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে।আর সেই লক্ষে ছোটবেলা থেকেই সুন্দর অভ্যাসগুলো
এবং সুশিক্ষা দিতে মা-বাবা অথবা বাড়ির মুরুব্বি ও পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে
মনোযোগী হতে হবে ।
পড়ার জন্য ছোটদের পুরস্কৃত করুন। ঠিকমতো পড়লে দুটো চকলেট দিতে পারেন অথবা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পড়লে ছয় মিনিট খেলার সুযোগ। আর এসবের লোভে ঝটপট পড়ার কাজটি সেরে নেবে বাচ্চারা । আপনি সময় ঠিক করে নিন , প্রতিদিন নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন কারণ বিশেষজ্ঞরা মনেকরে যে প্রতিরাতে হোম ওয়ার্ক এর জন্য চল্লিশ মিনিট যথেষ্ট সময়। আপনি শিশুকে বলুন যে তার পড়াশুনার কাজটি অসীম সময় পর্যন্ত নয়।
আপনি ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে
রাখুন যখন অ্যালার্মটা বেজে উঠবে তখন তার আর পড়তে হবে না। প্রশংসা করুন, কারণ
হচ্ছে ছোট-বড় যে কাজই করুক না কেন শিশুকে উৎসাহ দিন।
শিশুরা প্রশংসা বা উৎসাহ দেখতে
দারুণ ভালোবাসেন ।পড়াশোনার কারণে যদি প্রশংসা পাওয়া যায় তবে তা করতে পিছপা হয়
না তারা। আপনি নিজেও শিশুর সামনে পড়ুন কারণ আপনারা পড়া দেখে তার নিজের পড়াটা
নিজেরই পড়বে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ভিজিট করতে হলে এখানে ক্লিক করুন
কোন মন্তব্য নেই